আঠারো শতকের শেষদিকে জার্মানির স্যার স্যামুয়েল হ্যানিম্যান ম্যালেরিয়ার ঔষধ (সিনকোনা উদ্ভিদ) নিয়ে কাজ করছিলেন। কাজ করার সময় তিনি তা নিজের ওপর প্রয়োগ করে দেখলেন যে তার ম্যালেরিয়ার রোগের ন্যায় সেইম উপসর্গ দেখা দিয়েছে। এর কারন অনুসন্ধানের সময় তিনি হোমিওপ্যাথির প্রথম ও প্রধান নীতি (Principle) Like Cures Like আবিষ্কারের মাধ্যমে নতুন এক চিকিৎসা পদ্ধতি প্রবর্তন করেন যা তার নাম অনুসারে (হ্যানিম্যানহোমিওপ্যাথি) নামে পরিচিতি পায়।
হোমিওপ্যাথির প্রধান নীতিসমূহ (Principles)
- Like Cures like:– প্রধান এই নীতির মূল কথা হল, রোগ সৃষ্টির জন্য দায়ী এজেন্ট (অনুজীব, রাসায়নিক,পদার্থ ইত্যাদি) সেই রোগ নিরাময়ের ক্ষমতা রাখে। সোজা বাংলায় কাটা দিয়ে কাটা তোলা।
- Minimum potentized dose:- সক্রিয় ঔষধের মাত্রা (ঘনত্ব) যত কম হবে, ঔষধের কার্যকরীতা (ক্ষমতা) তত বেশি বৃদ্ধি পাবে।
- The Single Remedy:- একসাথে একাধিক Remedy ব্যবহার না করে মাত্র একটি Remedy ব্যবহার। (Single remedy at every single time)
- True Diseases:- প্রধান নীতি Like Cures like হলেও দুরারোগ্য রোগের ক্ষেত্রে এখানে মূলত হোমিওপ্যাথিক নিয়মে রোগীর DNA তে বিদ্যমান Predominant (প্রিডোমিন্যান্ট) True Diseases কে রেসিসিভ বা নিস্তেজ করা হয়ে থাকে। এর ফলে সেটি কর্তৃক সৃষ্ট শরীরে যাবতীয় জটিল লক্ষণ উপসর্গ বা রোগ-ব্যাধি স্থায়ীভাবে দূর হয়ে যায়।
আধুনিক বিজ্ঞান Vs হোমিওপ্যাথিক Principle
তাহলে যে জীবানু যে রোগ সৃষ্টিকরে সেই জীবানুই অতি-স্বল্প পরিমান দেহে পুশ করলে তা সেই রোগ প্রতিরোধ করে। যা এলোপ্যাথিতে ব্যবহৃত Like Cures like নীতির বাস্তব প্রমান।যদিও এলোপ্যাথিক ভ্যাকসিন যে নিয়মে প্রয়োগ করা হয় তার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় মানুষ পরবর্তীতে ভয়ংকর এবং জটিল জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে যেগুলি বহু ক্ষেত্রেই রিভার্স করা সময় সাপেক্ষ এবং কিছু ক্ষেত্রে দুঃসাধ্যও বটে।
তাছাড়া জটিল জটিল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় জর্জরিত এলোপ্যাথি তাদের নিজেদের দোষ-ত্রুটি আড়াল করতে এবং এক চেটিয়া ঔষধের ব্যবসা ধরে রাখতে হোমিওপ্যাথির বিরুদ্ধে শুরু থেকেই অপপ্রচার চালিয়ে আসছে। যদিও দুরারোগ্য ও জটিল জটিল রোগ নির্মূলে হোমিওপ্যাথির ক্রমাগত সফলতার কারণে, মেডিক্যাল মাফিয়াদের কোন অপপ্রচারই শেষে আর ঠিকছে না। কারণ একিউট ডিজিসের (নতুন রোগ) চিকিৎসায় চমক দেখাতে পারলেও ক্রনিক ডিজিসের (পুরাতন রোগ) ক্ষেত্রে এলোপ্যাথি স্থায়ীভাবে রোগ সারাতে ব্যর্থ ৮০% ক্ষেত্রেই। আপনি দেখবেন যেকোন ক্রনিক ডিজিসের ক্ষেত্রে এলোপ্যাথিক চিকিৎসকরা জটিল জটিল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াযুক্ত ওয়ান টাইম রাসায়নিক ঔষধগুলি মানুষকে সারা জীবন ধরেই খেয়ে যেতে বলছে, যা তাৎক্ষণিক আরাম দিলেও জটিল জটিল স্বাস্থ্য সমস্যা বা রোগ-ব্যাধি সৃষ্টি করে চলেছে মানব দেহে। তাছাড়া সাধারণ জ্বর-সর্দি থেকে শুরু করে অধিকাংশ রোগেই যখন তখন উচ্চ শক্তির এন্টিবায়োটিক ঔষধ প্রয়োগ করে চলেছে যা ব্যক্তির ভাইটাল ফোর্সকে চরম ভাবে দুর্বল করে তুলছে এবং এর ফলে খুব সহজেই আজকাল লোকজন অল্প বয়সেই জটিল জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ছে।
মেডিক্যাল মাফিয়ারা নিজেদের দোষ-ত্রুটি আড়াল করতে অন্যান্য চিকিৎসা ব্যবস্থাগুলির বিরুদ্ধে তাদেরই নিয়ন্ত্রিত বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে একচেটিয়া অপপ্রচার চালিয়ে আসছে শুধু থেকেই। কিন্তু আজকাল মিডিয়া প্রায় সবারই হাতের নাগালে রয়েছে। তাই চিকিৎসা নেয়ার ক্ষেত্রে যারা যাচাই বাছাই করে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন তারা শুরু থেকেই লাভবান হোন। আর যারা এলোপ্যাথির অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন অথবা কোন প্রকার যাচাই বাছাই করার মতো জ্ঞান রাখেন না তাদের অনেকেই চরম ক্ষতির মুখে পড়েন। কেউ কেউ আবার চিকিৎসা নিতে গিয়ে সহায় সম্পত্তি বিক্রি করে পথে পর্যন্ত বসে যান।তবে এটা ভাববেন না যে, আপনাকে এলোপ্যাথিক চিকিৎসা নিতে নিষেধ করা হচ্ছে । বরং আমি বলবো যেকোন ইমার্জেন্সি কেইসে আপনি নির্দ্বিধায় এলোপ্যাথিক বিষেশজ্ঞ ডাক্তার দেখিয়ে চিকিৎসা নিতে পারেন কিন্তু ক্রনিক কেইসে হোমিওপ্যাথি এবং কিছু ক্ষেত্রে ন্যাচারোপ্যাথি যে কারো জন্যই অতি উত্তম ও অধিক ফলদায়ক। এখানে শুধু ভয়াবহ কিছু অসঙ্গতি সম্পর্কে আপনাদের সচেতন করা হয়েছে যাতে কেউ প্রতারিত না হন।
মনে রাখবেনঃ যে চিকিৎসায় আপনার রোগ স্থায়ী ভাবে দূর হবে, যে চিকিৎসায় আপনার আর্থিক সাশ্রয় হবে, যে চিকিৎসায় আপনার শরীরে অন্য কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তৈরী হবে না, যে চিকিৎসায় আপনার দেহ-মন সার্বিক ভাবে ভালো থাকবে, আপনি সে চিকিৎসাটাই নিন – হোক সেটা হোমিওপ্যাথি, ইলেক্ট্রোপ্যাথি, এলোপ্যাথি, আর্য়ুর্বেদ, ন্যাচারোপ্যাথি বা অন্য কোন ট্রিটমেন্ট সিস্টেম।
Minimum Potentised Dose
সুতরাং বুঝতেই পারছেন, হোমিওপ্যাথির রয়েছে নির্দিষ্ট নিয়মনীতি যা বিশ্বের আর কোন চিকিৎসা পদ্ধতির নেই। আর হোমিওপ্যাথির নির্দিষ্ট নিয়মনীতি অনুসরণ করে ঔষধ প্রয়োগ করলে রোগ সেরে যাচ্ছে। কিন্তু ঔষধটি ঠিক কিভাবে রোগ সারাচ্ছে অর্থাৎ ভেতরে এর মেকানিজম কি? আধুনিক বিজ্ঞান আজ পর্যন্ত সেটা পুরুপুরি উদ্ঘাটন করতে পারেনি অর্থাৎ আবিষ্কার করতে পারেনি। বর্তমান বিশ্বে কোন বিজ্ঞানী যদি সেটা উদ্ঘাটন করতে পারেন তিনি যে একই সাথে কয়েকটি নোবেল পুরস্কার পেয়ে যাবেন তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু মেডিক্যাল মাফিয়ারা কখনও চায় না সে রহস্য উদ্ঘাটন হোক। তাই এই বিষয়ে গবেষণার জন্য কোন ফান্ড দিতেও কেউ রাজি নয়।
- বিভাজিত ঔষধ যতো সূক্ষ্ম হোক-না-কেন তার জড় পদার্থ অবিনশ্বর থাকবে।
- ঔষধ যতো বেশি সূক্ষ্ম হবে ততোবেশি শক্তিশালী হবে।
- বাঞ্জিত শক্তি লাভের প্রয়োজনে ঔষধ ইচ্ছামত বিভাজিত করা যায়।
The Single Remedy
ইতিমধ্যেই জেনেছেন, আধুনিক বিজ্ঞান এখনো হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা ব্যবস্থার পুরোপুরি পোস্টমর্টাম করতে পারেনি। হোমিওপ্যাথিক রেমেডি কিভাবে দেহে শোষিত হয়, কাজ করে রোগ থেকে আরোগ্য করে তা বের করতে পারেনি। অর্থাৎ বিজ্ঞান এখনও সে পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেনি বরং বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক সংস্থা নিজেদের ব্যর্থতা আড়াল করতে উল্টো হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসাকে Placebo effects বলে চালিয়ে দেয়।প্লাসেবো এমন একটি পদ্ধতি যেখানে কোন সক্রিয় মেডিসিন ব্যবহার করা হয় না। এই চিকিৎসায় ব্যবহৃত মেডিসিনের কোন Physiological properties দেহে কোন Pharmacological action নেই। এক্ষেত্রে আপনাকে বিশ্বাস করানো হয় যে আপনাকে সঠিক মেডিসিন দেওয়া হয়েছে কিন্তু তা করা হয় না। যখন আপনি বিশ্বাস করছেন যে আপনি সঠিক মেডিসিন নিচ্ছেন এবং আরোগ্য হচ্ছেন তখন আপনার মস্তিষ্ক স্বয়ংক্রিয়ভাবে সেই রোগের চিকিৎসার জন্য উপযুক্ত হরমোন, প্রোটিন নিঃসরন করে সেই রোগের চিকিৎসা করে থাকে। এবং আপনি সত্যি সত্যি সুস্থ হয়ে যান। কিন্তু হোমিওপ্যাথি যদি সত্যিই প্লাসেবো পদ্ধতি হতো তাহলে হয়তো দুয়েকটি ক্ষেত্রে রোগ সারানোর খবর শোনা যেত। আর এভাবে কোন একটি চিকিৎসা পদ্ধতি প্রায় ২০০ বছর যাবৎ সুনামের সাথে টিকে থাকা প্রায় অসম্ভব। অথচ বাস্তবে তার উল্টোটি দেখা যাচ্ছে। বর্তমান বিশ্বে ক্রনিক ডিজিস স্থায়ীভাবে নির্মূলের ক্ষেত্রে হোমিওপ্যাথির সাফল্যই শীর্ষে।
হোমিওপ্যাথিক ঔষধের তেমন কোন পার্শপ্রতিক্রিয়া না থাকায় বিশ্বের বহু দেশেই এমনকি FDA, WHO দ্বারা হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা নিষিদ্ধ নয় বরং সর্বাধিক ব্যবহৃত স্বীকৃত। তাছাড়া প্রায় দুইশো বছর এই চিকিৎসা চলে আসছে। এটি সফল বা কার্যকর না হলে এতো এতদিন কোন ভিত্তিহীন চিকিৎসা পদ্ধতি দাঁড়িয়ে থাকতে পারতো না।
আমেরিকাতে ফার্মাসিউটিকাল কোম্পানিগুলো মেডিকেল সেক্টরকে নিয়ন্ত্রণ করে? প্রায় ৫০ টি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালও তাদের দখলে, ১৯ শতকে আমেরিকায় হোমিওপ্যাথির জয়জয়কার ছিলো, গড়ে উঠেছিল শত শত হোমিওপ্যাথিক হাসপাতাল, বলতে গেলে সে সময় হোমিওপ্যাথিই হেলথ সেক্টর নিয়ন্ত্রণ করতো।
কিন্তু ২য় বিশ্বযুদ্ধের কিছু পরে এলোপ্যাথিক ফার্মাসিউটিকাল কোম্পানিগুলোর পক্ষ হতে যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রকে দেওয়া হলো লোভনীয় অফার, যাতে শুধু এলোপ্যাথিকে সায়েন্টিফিক এবং বাকী চিকিৎসা ব্যবস্থাকে নন সায়েন্টিফিক ঘোষণা দেয়া হয়। এতে আমেরিকার সরকার লোভনীয় অফারে রাজি হয়ে গেলো, হেলথ সেক্টরের মোটা অংকের মুনাফা সরকারের ফান্ডেও আসবে এই ভেবে। কিন্তু যুক্তরাজ্যে রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ এই প্রস্তাব নাকোচ করে দিলেন, যার কারনে এখনো যুক্তরাজ্যের হোমিওপ্যাথি মোটামুটি টিউব লাইটের মতো জ্বলছে।
বর্তমানে NHS সেই ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আছে, পারছেনা শুধু রাজ পরিবারের জন্য, কিন্তু তরপরেও তারা থেমে নেই, সরকারি হাসপাতালগুলো যেহেতু NHS এর আওতায় তাই তারা চিকিৎসকদের হোমিওপ্যাথিক ঔষধের সাপ্লাই বন্ধ করে দিয়েছে, ঘোষণা দিয়েছে যাতে সবাই এলোপ্যাথিক ঔষধ প্রেসক্রাইব করে, কিন্তু অনেক চিকিৎসকই নিজের টাকায় হোমিওপ্যাথিক ঔষধ কিনে রেখে রোগীকে প্রদান করে। তখনকার সময়ে এলোপ্যাথিক ঔষধ কোম্পানিগুলো আর মুনাফালোভী সরকার অধিক মুনাফার লোভে সব সরকারি হোমিওপ্যাথিক হাসপাতালগুলোকে বন্ধ করে নিজেদের আয়ত্বে নিয়ে জেনারেল হাসপাতাল বানিয়েছে। আজ মানুষকে কোন রোগের জন্য সারা জীবন ধরে ঔষধ খেয়ে যেতে হয়। ঔষধ ছাড়া মানুষ বাঁচে না। রাসায়নিক ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় জীবন প্রায় দুর্বিসহ কিন্তু বহু মানুষ সময় মতো তা বুঝতেই পারছে না। কেউ কেউ জীবন সায়াহ্নে এসে তা উপলোগধী করে। অনবরত রাসায়নিক ঔষধ সেবনের ফলে ভাইটাল ফোর্স দিন দিন নিম্নস্তরে পৌঁছায়। সাধারণ ভাইরাস আক্রমণ করলেই লাশের মিছিল শুরু হয়ে যায় এখন ইউরুপ এবং আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে।
হোমিওপ্যাথি বিরোধী সমালোচনা
আপনাদের জেনে রাখা ভালো, বর্তমান বিশ্বে হোমিওপ্যাথিই হল মেডিসিনের সর্বোচ্চ শাখা আর হোমিও চিকিৎসকরাই হলো বিশ্বের সবচেয়ে বড় মেডিসিন এক্সপার্ট ডাক্তার। সার্জারি বহির্ভুত প্রায় ৯০% রোগের চিকিৎসা একক ভাবেই কভার দিয়ে থাকে হোমিওপ্যাথি। বর্তমান পর্যন্ত হোমিও ট্রিটমেন্ট সিস্টেমের মেডিসিনের সংখ্যা হলো প্রায় ৮২০০ যা বিশ্বের সকল ট্রিটমেন্ট সিস্টেমের মেডিসিন এক সাথে করলেও হোমিও মেডিসিনের সমপরিমাণ হবে না। হোমিও মেডিসিন সরাসরি মানব দিয়ে প্রয়োগ করে প্রোভিং করা হয়ে থাকে এবং হোমিওপ্যাথির নির্দিষ্ট নিয়ম নীতি অনুসরণ করে রোগারোগ্যে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
আপনি জানেন কি? বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করছে শুধুমাত্র ডায়াবেটিস সহ বহু ক্রনিক রোগের ঔষধ বিক্রি করার প্রচারণায়। তবে এটা হয়তো অনেকেই জানেন, এলোপ্যাথিক ফার্মেসি গুলোর বড় মাপের গ্রাহক হলো ডায়াবেটিস রোগীরা। এই ডায়াবেটিস গবেষণার নামে বিশ্বব্যাপি মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার ব্যয় করা হচ্ছে। অথচ কোন কার্য়কর ঔষধ কি আবিস্কার হয়েছে আজ পর্যন্ত? শুধু গবেষণা চলছেই!! মনে রাখবেন এলোপ্যাথিক মেডিক্যাল মাফিয়ারা কেয়ামত পর্যন্ত বলবে গবেষণা চলছে কিন্তু আদৌ এই সমস্যা নির্মূলের কোন ঔষধই আবিষ্কার করবে না!