ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম বা আইবিএস Irritable bowel syndrome (IBS) পরিপাকতন্ত্রের একটি জটিল সমস্যা বলেই বিবেচনা করা হয়। বহু ক্রনিক ডিজিসের মতো এই সমস্যারও অন্যান্য চিকিৎসা শাস্ত্রে কোন স্থায়ী চিকিৎসা নেই কিন্তু যাথাযথভাবে রোগীর কেইস হিস্ট্রি নিয়ে চিকিৎসা দিলে আইবিএস সম্পূর্ণ নির্মূল হয় হোমিও চিকিৎসায়। তার মানে আবার এই না যে – আপনি একজন হোমিও ডাক্তারের কাছে গেলেন আর সাথে সাথেই ভালো হয়ে যাবেন। আইবিএস ট্রিটমেন্ট নেয়ার ক্ষেত্রে আপনাকে প্রথমেই সেরূপ দক্ষ একজন হোমিও চিকিৎসক খুঁজে বের করতে হবে যিনি হোমিওপ্যাথির নির্দিষ্ট নিয়মনীতি অনুসরণ করে আপনার চিকিৎসা কার্য পরিচালনা করবেন।
যখন আমার পেসেন্টদের জিজ্ঞেস করি কখন কিভাবে আপনার এই সমস্যা শুরু হয়েছে? তখন তারা যে কারণগুলির কথা বলে থাকেন সেগুলি মূলত এই সমস্যার প্রকৃত কারণ নয়। সুপারফিশিয়াল অর্থাৎ উপর দিকে চিন্তা করলে এটি মূলত অন্ত্রের স্বাভাবিক কার্যকারিতার ত্রুটি জনিত একটি সমস্যা বলে বিবেচিত হয়। বিভিন্ন গবেষণায় এর কারণ হিসেবে নানা থিওরি বা ব্যাখ্যা দেওয়া হলেও কোন সুনির্দিষ্ট কারণ খুঁজে না পেয়ে একে ফাংশনাল গ্যাস্ট্রো-ইনটেস্টাইনাল ডিজঅর্ডার বলা হয়ে থাকে। এই সমস্যায় আক্রান্ত রোগীরা যে অভিযোগ গুলি করে থাকেন –
- স্যার এই সমস্যা আমি নিজে নিজে তৈরি করেছি। জীবনে কোন ব্যালান্স ছিল না। মাঝে মাঝে নেশাও করতাম। সেই যে ৫ বছর আগে পেটের সমস্যার শুরু এখনও চলছে।
- কেউ বলছেন – সব সময় ভাজাপোড়া খাবার খেতাম। বাহিরে অনবরত খাওয়ার ফলে আমার এই সমস্যা হয়েছে।
- কেউ বলছেন – দাওয়াত খেতে গিয়েছিলাম। সেই সেদিন রাতে পাতলা পায়খানার সমস্যা হয় তারপর এলোপ্যাথিক ডাক্তার দেখিয়ে ঔষধ খেয়ে পাতলা পায়খানা ঠিক হয়। কিন্তু তারপর থেকে আজ পর্যন্ত পেটের নানা সমস্যা লেগেই আছে।
- কেউ বলছেন – একবার ভরপেট খাওয়ার পর হজমের জন্য ঔষধ খেয়েছিলাম। সেই থেকে সমস্যার শুরু।
- কেউ বলছেন – সমস্যাটি আমার পিতারও আছে আর আমার বয়স যখন ১৫ তখন থেকে আমারও শুরু হয়।
- কেউ বলছেন – স্যার আমার অন্ত্রের স্বাভাবিক কার্যক্রমে ত্রুটি আছে তাই আমি আইবিএস সমস্যায় ভুগছি।
- কেউ বলছেন – আমার মা বলেছেন, জন্মের পর থেকেই আমার এই সমস্যা। অনেক ডাক্তার দেখিয়েছেন কিন্তু কাজ হয়নি।
কোন কোন চিকিৎসা বিজ্ঞানী বলছেন – খাবার পাকস্থলী থেকে পরিপাকনালীর মধ্য দিয়ে বৃহদন্ত্রের শেষ অংশ বা মলাশয়ে যাওয়ার সময় অন্ত্রের প্রাচীর একটি নির্দিষ্ট ছন্দে সংকুচিত ও প্রসারিত হয়। এই সংকোচন-প্রসারণ স্বাভাবিকের তুলনায় দ্রুত হলে পেটে গ্যাস হয়, পেট ফেঁপে যায় এবং ডায়রিয়া হয়। আবার অন্ত্রের এই সংকোচন-প্রসারণ যদি স্বাভাবিকের তুলনায় ধীর হয়ে পড়ে তাহলে মল শক্ত হয়ে যায় অর্থাৎ কোষ্ঠকাঠিন্য জনিত আইবিএস তৈরী হয়।
কোন কোন চিকিৎসক বলছেন – আপনার সমস্যা হরমোনজনিত, অন্ত্রের প্রতিরোধ ব্যবস্থার পরিবর্তন, দুশ্চিন্তা ও হতাশা অথবা গ্যাস্ট্রোইন্টেস্টাইনাল নার্ভাস সিস্টেমের অস্বাভাবিকতার কারণেও এই রোগ হতে পারে। তর্কের খাতিরে ধরে নিলাম সবই ঠিক, কিন্তু চিকিৎসা দিয়ে ঠিক করা যাচ্ছে না কেন?
বস্তুত এরকম বহু সুপারফিশিয়াল চিন্তা ভাবনা করে কারণ খুজার চেষ্টা করে থাকেন চিকিৎসক এবং রোগীরা। অথচ এর কোনটিই আইবিএস সমস্যাটির মূল কারণ নয়। এর প্রকৃত কারণ জানতে হলে আপনাকে আরো গভীরে গিয়ে চিন্তা করতে হবে যা একমাত্র করতে পারে বিশ্বের একটি মাত্র ট্রিটমেন্ট সিস্টেম – হোমিওপ্যাথি।
ইরিটেবল বাওয়েল সিন্ড্রোম আইবিএস এর প্রকৃত কারণ মূলতঃ কি?
আগেই বলেছি নানা প্রকার সুপারফিশিয়াল বা উপরি উপরি চিন্তা করে অথবা নানা প্রকার ব্যর্থ মেডিক্যাল টেস্ট করে আইবিএস সমস্যার কারণ নির্ণয়ের চেষ্টা করা হয়ে থাকে আর সে অনুযায়ী চিকিৎসা দেয়া হয়ে থাকে বিসদৃশ চিকিৎসা শাস্ত্রে বিশেষ করে এলোপ্যাথিতে। কিন্তু এক্ষেত্রে আইবিএস কখনও নির্মূল করা সম্ভব হয়না সাময়িক আরাম পাওয়া যায় মাত্র। এলোপ্যাথিক সিস্টেমে মূলত রোগের কারণ নির্ণয় করেই চিকিৎসা দেয়া হয়।
এর প্রধান কারণ হলো আপনি মূলত একটি প্রকৃত রোগের সৃষ্ট কিছু উপসর্গ বা লক্ষণ ঠিক করার চিকিৎসা করছেন। তাই লক্ষণ ঠিক হচ্ছে কিন্তু প্রকৃত রোগের চিকিৎসা না হওয়ায় লক্ষণ বা উপসর্গ আবার প্রকাশ পাচ্ছে আর ভেতরের প্রকৃত রোগ বা True Disease দিন দিন আরো জটিল হচ্ছে। সেই প্রকৃত রোগটি মূলত কি আর তা দূর করার উপায়ই বা কি? এ সম্পর্কে বর্তমান বিশ্বের একটি মাত্র চিকিৎসা শাস্ত্রই ধারণা দিয়ে থাকে তা হল – হোমিওপ্যাথি।
উদাহরণস্বরূপ মনে করুন, শুক্রাণু এবং ডিম্বাণুর মিলনে ঘন্টা খানেক হলো একটি জাইগোট তৈরি হয়েছে। সেখানে রয়েছে তার পিতা মাতা উভয়ের থেকে প্রাপ্ত ক্রোমোজোম যা হচ্ছে বংশগতির প্রধান উপাদান। মজার ব্যাপার হলো জাইগোটটির বয়স ১ ঘন্টা হলেও তার ভাইটাল ফোর্সকে ঘিরে যে ক্রোমোজোম এর অনুলিপি রয়েছে তার বয়স কিন্তু কয়েক লক্ষ বছর অর্থ্যাৎ এই অনুলিপি ধারাবাহিকভাবে লক্ষাধিক বছরের পুরাতন জেনেটিক মেটেরিয়ালসও বহন করছে।
তাছাড়া যতদিন আপনার ভাইটাল ফোর্স শক্তিশালী অবস্থায় থাকবে তত দিন ভেতরের প্রকৃত রোগটি বা অনেকগুলি জটিল রোগের জেনেটিক মেটেরিয়াল এমনিতেই নিস্তেজ অবস্থায় থাকবে। আর যখন ভাইটাল ফোর্স দুর্বল হয়ে যাবে তখন ভেতরের সেই True Disease বা প্রকৃত রোগটি প্রকট হয়ে উঠবে অথবা নানা প্রকার উপসর্গ প্রকাশ করে আপনাকে কষ্ট দিবে।
মূলত সুপারফিশিয়াল বা উপরের দিক চিন্তা করে প্রকৃত রোগটির সৃষ্ট উপসর্গকে একটি রোগের নাম দিয়ে বিভিন্ন চিকিৎসা শাস্ত্র সেটিকে নির্মূল করার চেষ্টা করে থাকে। উপসর্গ চলে যায়, কিছুকাল পরে আবার সেই উপসর্গ প্রকাশ পায় বা সেটি নতুন উপসর্গ নিয়ে অন্যভাবে প্রকাশ পায়। কারণ ভেতরের প্রকৃত রোগটি নিয়ে মোটেও চিন্তা করে না এলোপ্যাথিক এবং অন্যান্য ট্রিটমেন্ট সিস্টেম আর তাই সমস্যাও দূর হয় না স্থায়ী ভাবে। ঔষধ খেয়ে খেয়ে ভাল থাকার চেষ্টা করা হয় মাত্র। ইরিটেবল বাওয়েল সিন্ড্রোম (আইবিএস) তেমনি একটি True Disease বা প্রকৃত রোগের কিছু উপসর্গ মাত্র।
প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম পর্যন্ত নানা রোগ ব্যাধিতে ভুগতে থাকা পূর্বপুরুষের জেনেটিক মেটেরিয়াল আপনি বহন করে চলেছেন। তারা কত প্রকারের স্বাস্থ সমস্যায় আক্রান্ত ছিলেন একটি বারও কি আপনি সেটা চিন্তা করেছেন? আদৌ না !
হোমিও চিকিৎসক আপনাকে চিকিৎসা দেয়ার সময় আপনার কনস্টিটিউশন অনুসারে ঔষধ বের করার জন্য আপনার হিস্ট্রি নিবেন সাথে আপনার শৈশবের জীবনদর্শন, আপনার পিতা-মাতা, দাদা-দাদি, নানা-নানীর হিস্ট্রি নিবেন। তখন অভিজ্ঞ একজন হোমিও চিকিৎসক বের করবেন আপনার ভেতরে প্রকৃত রোগের কি কি জেনেটিক মেটেরিয়াল আছে। তারপর ধাপে ধাপে নির্দিষ্ট মাত্রায় ঔষধ প্রয়োগ করে সেগুলিকে প্রকট অবস্থা থেকে সুপ্তাবস্থায় পাঠাবেন এবং আপনার ভাইটাল ফোর্সকে শক্তিশালী করে তুলবেন। তখন আপনার মধ্যে কোন রোগ জটিলতা থাকবে না এবং আপনি ভালো থাকবেন।
৭০ শতাংশ আইবিএস রোগীদের মধ্যে মূলত Tubercular Diathesis প্রকট হয়ে থাকে। যা মূলত Psoric miasm এর Syphilitic miasm মিলিত হয়ে সৃষ্টি হয়।
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা নেয়ার সময় আপনি যদি চিকিৎসককে বিস্তারিত তথ্য দিয়ে সাহায্য না করেন তাহলে চিকিৎসক আপনাকে ঠিকঠাক ভাবে চিকিৎসা দিতে ব্যর্থ হতে পারেন। কারণ একজন হোমিও চিকিৎসক আপনার দেয়া তথ্য অনুযায়ী আপনাকে পর্যালোচনা করে সামনে আগাবেন এবং ঔষধ সিলেকশন করবেন। সব ঠিক থাকলে আইবিএস এর মতো সকল জটিল পীড়াতেই আপনি হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা নিয়ে স্থায়ী আরোগ্য লাভ করবেন ইনশা-আল্লাহ।