আইবিএস হচ্ছে ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম Irritable bowel syndrome (IBS) এটি মূলত গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ট্র্যাক্টের একটি জটিল সমস্যা। আপনি হয়তো দেখে থাকবেন আপনার আশপাশে অনেকেই পেটের এই বিরক্তিকর সমস্যায় ভুগছে। এর কারণে আক্রান্ত ব্যক্তিরা সাধারণত দীর্ঘদিন কষ্ট পেয়ে থাকেন। এলোপ্যাথিতে আইবিএস এর স্থায়ী চিকিৎসা না থাকায় ব্যর্থ হয়ে একের পর এক চিকিৎসক পরিবর্তন করতে থাকেন এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার আশায়।
কিন্তু তাদের অনেকেই জানেন না এই রোগ থেকে মুক্তির একটি কার্যকর চিকিৎসা হলো হোমিওপ্যাথি। এর জন্য দক্ষ একজন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক খুঁজে বের করে ধৈর্য্য ধরে চিকিৎসা নিলে ধীরে ধীরে এই রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। রোগ আরোগ্য বিভিন্ন ফ্যাক্টরের উপর নির্ভর করে থাকে যার উপর ভিত্তি করে কেউ দ্রুত সুস্থ হয় আবার কেউ দেরিতে সুস্থ হয়।
সমগ্র বিশ্বেই এই পেটের এই জটিল পীড়ার প্রকোপ রয়েছে। ইউরুপ বা আমেরিকাতেতে প্রতি ১০ জনে অন্তত একজন মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। বিসদৃশ প্যাথি যেমন এলোপ্যাথিতে এই রোগের স্থায়ী কোন চিকিৎসা না থাকায় তাদেরকে সারা জীবন ধরেই ঔষধ খেয়ে খেয়ে ভালো থাকার চেষ্টা করে যেতে হয়। কেউ কেউ প্রপার হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা নিয়ে এক সময় সুস্থতা লাভ করে থাকে। এবার আসুন এই সমস্যা হলে কি কি লক্ষণ ও উপসর্গ প্রকাশ পায় সেগুলি জেনে নেই।
আইবিএস এর সাধারণ লক্ষণ এবং উপসর্গ
- পেটের অস্বস্থি, পেট ফাঁপা, পেটে ব্যথা
- পেটে ভুটভাট শব্দ হওয়া
- ক্ষুধা মন্দা হওয়া বা মোটেই না থাকা আবার কখনো অতিরিক্ত ক্ষুধা থাকা
- গলা বুক জ্বালা ও বমি বমি ভাব
- ঢেকুর আসা এবং খাওয়ার পর এর তীব্রতা বেড়ে যাওয়া
- প্রতিনিয়ত গ্যাস হওয়া এবং ঘন ঘন মলদ্বার দিয়ে গ্যাস বের হওয়া
- ঘন ঘন পাতলা মল কিংবা পানির মতো তরল উদরাময়
- পায়খানায় যাওয়ার বেগ সামলাতে না পারা এবং মলদ্বারে ব্যথা
- খাওয়ার পরই টয়লেটের বেগ হওয়া
- প্রতিবার মলত্যাগের আগে বা পরে এবং মলের সঙ্গে মিউকাস ক্ষরণ
- কোষ্টবদ্ধ অবস্থায় মলের বেগ না আসা কিংবা খুবই শক্তমল কষ্টে অল্প অল্প বের হওয়া
- প্রচণ্ড শারীরিক দুর্বলতা, মস্তিষ্ক ক্লান্তি ও কাজের প্রতি অমনোযোগিতা
- খিটখিটে মেজাজ, উত্তেজনা, অবসাদ এবং উদ্বিগ্নতা
- শরীরের ওজন হ্রাস পাওয়া
এই গুলি হল আইবিএস সমস্যার কিছু সাধারণ লক্ষণ ও উপসর্গ যেগুলি অবশ্যই ব্যক্তি ভেদে ভিন্ন হবে তাদের নিজেদের ব্যক্তি স্বাতন্ত্রভেদে।
আইবিএস এর প্রকৃত লক্ষণ এবং উপসর্গ
হোমিওপ্যাথি ছাড়া অন্যান্য ট্রিটমেন্টে সিস্টেমে শুধু পেটের যন্ত্রনাকেই আইবিএস এর লক্ষণ এবং উপসর্গ হিসেবে প্রাধান্য দেয়া হয়। কিন্তু হোমিওপ্যাথি মূলত সম্পূর্ণ মানুষটির লক্ষণ ও উপসর্গকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে কারণ সবকিছু মিলেই কিন্তু একটি মানুষ। মূলত মানুষের ভেতরে থাকা প্রকৃত রোগ বা তার জেনেটিক মেটেরিয়াল মানব দেহ-মনে আইবিএস নামক সমস্যায় যেসকল লক্ষণ এবং উপসর্গ তৈরি করে সেগুলিই হলো এই রোগের জন্য প্রকৃত উপসর্গ তবে সেগুলি ব্যক্তি বিশেষের ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে প্রকাশিত হয়ে থাকে।
মানুষ যখন রোগাক্রান্ত হয় তখন তার শরীরে একটা সার্বিক পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়। আইবিএস এর ক্ষেত্রে পেটের নানারূপ লক্ষণের সাথে আপনার পিপাসা, জিহ্বা, লালা, ক্ষুধা, খাদ্য, ঘুম, স্বপ্ন, ঘাম, পায়খানা, প্রস্রাব ইত্যাদির ক্ষেত্রেও কোন না কোন পরিবর্তন পরিলক্ষিত হবে। মূলত সেগুলিও আপনার রোগের ক্ষেত্রে প্রধান লক্ষণ বলে বিবেচিত হবে। কিন্তু পৃথিবীর কোন চিকিৎসা শাস্ত্রই এই বিষয়গুলি সার্বিক ভাবে পর্যালোচনা করে চিকিৎসা দিতে পারে না, একমাত্র হোমিওপ্যাথি ছাড়া। অন্যান্য সকল চিকিৎসা শাস্ত্র মূলত স্থানিক বা উপরি উপরি চিন্তা করে এই সমস্যাগুলি সমাধানের চেষ্টা করে আর বিফল হয়।
পৃথিবীর একটি মাত্র চিকিৎসা শাস্ত্রই আপনার ভেতরের মানুষটাকে নিয়ে চিন্তা করে আর সেটা হলো – হোমিওপ্যাথি।
হোমিওপ্যাথি যেহেতু মানুষের সার্বিক অবস্থা নিয়ে চিন্তা করে ট্রিটমেন্ট দিয়ে থাকে তাই প্রকৃত আরোগ্য লাভে কিছুটা সময় লাগলেও অধিকাংশ রোগীরাই নির্মল আরোগ্য লাভ করে বিধায় দেহ-মন সর্বদিক থেকেই সে ভালো থাকে – যাকে বলে সুস্বাস্থ্য।